আমরা প্রতিনিয়ত চেক এর মাধ্যমে লেনদেন করে থাকি। কিন্তু অনেক সময় এমন হয় যে কিছু অসাধু ব্যাক্তি চেকগ্রহীতাকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না রেখেই আপনাকে চেক দেয় (যদিও চেক ডিজঅনারের আরো কারণ থাকতে পারে) । যার দরুন চেক গ্রহীতা বিপদে পরে যায়। এক্ষেত্রে চেক গ্রহীতা যা করতে পারে, তার তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলঃ
১। চেক দাতার সাথে যোগাযোগ করাঃ হতে পারে একাউন্টে টাকা না থাকা কিংবা যে কারনে ডিজঅনার হয়েছে তা চেক দাতার অনিচ্ছাকৃত। তাই আপনার উচিৎ হবে প্রথমে চেক দাতার সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করা। এক্ষেত্রে যদি চেক দাতা অন্য কোন এক তারিখে টাকা প্রদানের আশ্বাস দেয়, তাহলে অপেক্ষা করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনভাবেই, চেক ডিজঅনার হওয়ার পর ত্রিশ দিন অথবা চেক এর তারিখ হইতে ছয় মাস অতিক্রান্ত না হয়ে যায়। তাহলে ফলপ্রসু আইনি পদক্ষেপ নেয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় অনেককে দেখেছি এরকম টোপে পরে চেক এর মেয়াদ উত্তীর্ন করতে।
২। লিগ্যাল নোটিশঃ যদি আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা আদায় সম্ভব না হয়, তাহলে আপনাকে আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে চেক দাতাকে টাকা প্রদানের জন্য ৩০ দিনের সময় প্রদান করিয়া নোটিশ দিতে হবে। যদি উক্ত ৩০ দিনের মধ্যে চেক দাতা আপনার টাকা পরিশোধ করে, তাহলে এখানেই শেষ। অন্যথা পরের স্টেপ অর্থাৎ মামলা করতে হবে।
৩। মামলা দায়েরঃ যখন আপনি উপরের সব পন্থাই গ্রহন করে ব্যর্থ হয়েছেন, তখন টাকা আদায়ে একটা পথই খোলা। তা হচ্ছে মামলা দায়ের। টাকা প্রদানের জন্য যে ৩০ দিন সময় দেয়া হয়, তা পার হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে মামলা করতে হবে। মামলা করতে আপনাকে চেক, ডিজঅনার স্লিপ, লিগ্যাল নোটিশ ও ডাক রশিদ এর ফটোকপি আদালতে জমা দিতে হবে এবং মুল কপি সাথে রাখতে হবে। পরবর্তীতে ট্রায়াল এর সময় আপনাকে মুল কপি আদালতে জমা দিতে হবে। মামলা বিচারিক হাকিম এর আদালতে দায়ের হবে, কিন্তু বিচার হবে দায়রা কোর্টে।
৪। রায় ও টাকা আদায়ঃ সমস্ত সাক্ষী প্রমান পর্যালোচনায় আদালত আপনার কেসের সত্যতা পেলে আপনার পক্ষে রায় দিবেন। আদালত এক্ষেত্রে চেকদাতাকে ১ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং চেক এর টাকার তিন গুন পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে। তবে জরিমানার পরিমান যাই হোক, আপনি শুধু চেকে উল্লেখিত টাকা পাওয়ারই হকদার হবেন।
এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন The Negotiable Instruments Act, 1881 আইনের ১৩৮ ধারা পড়ুন। কোন প্রশ্ন থাকলে তা করতে ভুলবেন না।
বিশেষ নোটঃ এই পোস্টটি সাধারন মানুষের বোঝার স্বার্থে সরল ভাষায় লিখা হয়েছে। কোন টেকনিক্যাল আইনি বিষয় আলোচনা হয়নি। আইন সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয় ও প্রত্যেকটি কেইস ই ভিন্ন বিধায় এই পোস্টকে আইনি পরামর্শ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। আমরা শুধু প্রাথমিক ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহনের আগে অবশ্যই আপনার আইনজীবীর সাথে আলোচনা করুন। ধন্যবাদ।